নবজাতক শিশুদের ঘুমের ধরণ প্রাথমিকভাবে তাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ির (circadian rhythm) সম্পূর্ণভাবে গঠিত না হওয়ার কারণে একটু আলাদা হয়। তারা দিন ও রাতের পার্থক্য বুঝতে শেখেনি, তাই তারা সাধারণত ক্ষুধা, আরামদায়ক অবস্থা, এবং স্বাস্থ্যগত কারণে যেকোনো সময় জেগে ওঠে বা ঘুমায়।
গর্ভাবস্থার সময় মাতৃগর্ভে শিশুরা সাধারণত মায়ের চলাচলের সময় শান্ত থাকে এবং রাতের বেলা বেশি সক্রিয় থাকে। জন্মের পর, তাদের এই অভ্যাস থেকে নতুন সময়সূচিতে অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লাগে। ধীরে ধীরে, প্রায় তিন থেকে চার মাস বয়সে তাদের ঘুমের অভ্যাস একটু বেশি স্বাভাবিক হয় এবং তারা রাতের বেলা বেশি ঘুমাতে শুরু করে।
শিশুকে দিনের বেলা উজ্জ্বল আলোতে রাখা এবং রাতে অন্ধকার ও শান্ত পরিবেশে রাখলে তাদের শরীরের ঘড়ি দ্রুত সেট হতে সাহায্য করতে পারে।
নবজাতক শিশুদের ঘুমের ধরণ সম্পর্কে আরও কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো:
১. অপরিপক্ক মস্তিষ্ক: নবজাতক শিশুদের মস্তিষ্ক জন্মের সময় পুরোপুরি পরিপক্ক হয় না। এই কারণে তাদের ঘুমের চক্র খুবই ছোট এবং অসম হয়। নবজাতকদের ঘুম সাধারণত ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং তাদের REM (Rapid Eye Movement) ঘুমের সময় বেশি হয়। এই পর্যায়টি স্বপ্নের সাথে সম্পর্কিত এবং মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
২. ক্ষুধা ও খাদ্যের প্রভাব: নবজাতক শিশুদের পেট ছোট থাকে, তাই তাদের প্রায়ই খাবার খাওয়া দরকার হয়। রাতে তাদের ঘন ঘন জাগ্রত হওয়ার অন্যতম কারণ ক্ষুধা। দিনে ঘুমানোর সময় তাদের শরীরে শক্তি সংরক্ষণ হয় এবং রাতে ঘন ঘন খাওয়ার জন্য তারা জাগে।
৩. শারীরিক আরামদায়কতা: শিশুরা যদি গরম বা ঠান্ডা অনুভব করে, অসুস্থ থাকে, বা কোনোভাবে অস্বস্তি অনুভব করে, তাহলে তারা রাতে জাগতে পারে।
৪. অ্যাডজাস্টমেন্ট: গর্ভাবস্থায়, শিশুরা মাতৃগর্ভে যখন মায়ের চলাচল থাকে তখন মায়ের গতি তাদের শুইয়ে রাখে। কিন্তু রাতের সময় যখন মা বিশ্রামে থাকেন, শিশুরা বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। জন্মের পর এই অভ্যাস কিছু সময়ের জন্য বজায় থাকতে পারে।
৫. দিন-রাত চক্র শেখানো: নবজাতক শিশুদের দিন ও রাতের পার্থক্য শেখানো অভিভাবকদের দায়িত্ব। দিনের বেলা শিশুকে বেশি আলোতে রাখা এবং খেলাধুলা বা অন্যান্য সক্রিয় কার্যক্রম করা, আর রাতে অন্ধকার ও শান্ত পরিবেশে রাখা তাদের শরীরের ঘড়ি ধীরে ধীরে সঠিকভাবে সেট হতে সাহায্য করে।
৬. স্বাস্থ্যের বিষয়: যদি কোনো নবজাতক শিশু অসাধারণভাবে রাতে জেগে থাকে বা ঘুম নিয়ে সমস্যা হয়, তাহলে এটি শারীরিক কোনো সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে, যেমন গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, কোলিক, বা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা।
অভিভাবকদের জন্য ধৈর্য ও সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নবজাতকের ঘুমের ধরন সময়ের সাথে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে স্বাভাবিক ঘুমের প্যাটার্নে পরিণত হয়।
#healthcare #tips #newborn #care #parenting #parents #parenthood #ParentingTips #parentinghacks #ParentingJourney
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন