নবজাতকের দাঁত: যত্ন ও তথ্য
নবজাতকের দাঁত নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। দাঁত গজানো একটি স্বাভাবিক এবং গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। যদিও নবজাতকের জন্মের সময় সাধারণত দাঁত দেখা যায় না, কিছু শিশুর ক্ষেত্রে জন্ম থেকেই দাঁতের অস্তিত্ব থাকতে পারে। এটি "নাটাল টিথ" বা জন্ম দাঁত নামে পরিচিত। এটি খুবই বিরল এবং নবজাতকদের মাত্র ১-২% ক্ষেত্রে দেখা যায়।
এই দাঁতগুলো নবজাতকের মুখের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করে।
নবজাতকের দাঁত এবং এটির যত্ন সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরি, যাতে শিশুর সামগ্রিক মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
নবজাতকের দাঁতের গঠন
শিশুর দাঁত গর্ভাবস্থার প্রায় ৬ষ্ঠ সপ্তাহ থেকেই মাড়ির ভেতরে গঠন শুরু হয়। তবে দাঁত সাধারণত জন্মের পর ৬ থেকে ১২ মাস বয়সে মাড়ি ফেটে বের হয়। এই সময়টাকে "টিথিং" (Teething) বলা হয়। কিন্তু কিছু শিশুর ক্ষেত্রে, জন্মের সময়ই এক বা একাধিক দাঁত দেখা যায়। এগুলোকে নাটাল টিথ বলা হয়।
এটা কি কোন সমস্যা?
নাটাল টিথ সাধারণত অস্বাভাবিক নয়, তবে এটি কখনো কখনো অস্বস্তি বা সমস্যার কারণ হতে পারে। যেমন:
- মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় ব্যথা।
- দাঁতের শেকড় দুর্বল থাকলে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি।
- মাড়িতে ক্ষত সৃষ্টি।
দাঁত গজানোর লক্ষণ
নবজাতকের দাঁত গজানোর সময় কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এগুলো হলো:
- লাল ও ফোলা মাড়ি: মাড়ি ফুলে যায় এবং স্পর্শ করলে ব্যথা হয়।
- বেশি লালা ঝরা: টিথিং-এর সময় শিশুর মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা বের হয়।
- মাড়ি কামড়ানোর প্রবণতা: দাঁত বের হওয়ার চাপে শিশুরা মাড়ি কামড়াতে চায়।
- জ্বর বা অস্বস্তি: কিছু ক্ষেত্রে শিশুর হালকা জ্বর বা বিরক্তিভাব দেখা যায়।
- খিটখিটে মেজাজ: অস্বস্তির কারণে শিশুরা বিরক্ত হতে পারে।
নবজাতকের দাঁতের যত্নের উপায়
দাঁত এবং মাড়ির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অনুসরণ করা উচিত:
- মাড়ি পরিষ্কার রাখা: শিশুর মাড়ি নরম এবং পরিষ্কার কাপড় বা গজ দিয়ে নিয়মিত মুছে দিন।
- মাড়ি ম্যাসাজ: মাড়ির ব্যথা কমানোর জন্য পরিষ্কার আঙুল দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন।
- ঠান্ডা টিথিং রিং ব্যবহার: ব্যথা বা অস্বস্তি কমানোর জন্য টিথিং রিং কার্যকর হতে পারে।
- ডেন্টিস্টের পরামর্শ: নাটাল টিথ বা অন্য কোনো জটিলতা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিন।
- সঠিক খাদ্য গ্রহণ: শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করুন।
নাটাল টিথের সমস্যা সমাধান
যদি নবজাতকের নাটাল টিথের কারণে সমস্যা দেখা দেয়, তবে এটি সরানোর প্রয়োজন হতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়। নাটাল টিথ থাকলে শিশুর খাওয়ানোর পদ্ধতি কিছুটা বদলানো যেতে পারে।
নবজাতকের দাঁতের বিকাশ
প্রথম দাঁত গজানোর পর থেকে ৩ বছর বয়সের মধ্যে শিশুর মোট ২০টি দুধ দাঁত বের হয়। এগুলোর সঠিক যত্ন নেওয়া ভবিষ্যতে স্থায়ী দাঁতের জন্য একটি মজবুত ভিত্তি তৈরি করে।
শেষ কথা
নবজাতকের দাঁত নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা না করে সঠিক তথ্য জানুন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। দাঁতের স্বাস্থ্য সঠিকভাবে রক্ষা করলে শিশুর সুন্দর হাসি ও সুস্থ দাঁতের বিকাশ নিশ্চিত হবে।
তথ্যসূত্র
1. American Academy of Pediatrics (AAP):
Infant oral health guidelines and management during teething.
AAP Official Website
2. Mayo Clinic:
Comprehensive guide to teething symptoms and care.
Mayo Clinic Official Site
3. Cleveland Clinic:
Teething in infants: Common signs and remedies.
Cleveland Clinic
4. World Health Organization (WHO):
Oral health and care guidelines for children.
WHO Oral Health Information
5. American Dental Association (ADA):
Managing natal teeth and teething pain.
ADA Website
6. PubMed Research Articles:
Studies on natal teeth prevalence and management.
PubMed
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন