বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্বল্পমেয়াদি পদ্ধতি

জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্বল্পমেয়াদি পদ্ধতি

সুখী পরিবার ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে পরিবার পরিকল্পনা ও জন্ম নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা অপরিসীম। আজ আমরা জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্বল্পমেয়াদি পদ্ধতি সম্পর্কে জানব।

স্বল্পমেয়াদি জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

স্বল্পমেয়াদী পদ্ধতি কি?

জন্মনিয়ন্ত্রণের যেসব পদ্ধতি নিয়মিত ব্যবহার করতে হয় অথবা একবার নিলে অল্প কিছুদিনের জন্য গর্ভধারণ বন্ধ থাকে সেগুলোকে স্বল্পমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বলে। স্বল্পমেয়াদী পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে মহিলাদের জন্য খাবার বড়ি ও ইনজেকশন এবং পুরুষদের জন্য কনডম।

স্বল্পমেয়াদি জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

স্বল্পমেয়াদী পদ্ধতি কাদের জন্য উপযোগী?

খাবার বড়ি ও কনডম সাধারণত নব-বিবাহিত দম্পতি যাদের এখনও সন্তান হয়নি তাদের জন্য উপযোগী। এছাড়াও বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে কনডম ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি, যেমন:

  • স্ত্রী পরপর দুইদিন বড়ি খেতে ভুলে গেলে
  • স্ত্রী নির্দিষ্ট সময়ে ইনজেকশন নিতে না পারলে পরবর্তী ইনজেকশন নেয়া পর্যন্ত
  • স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণের পর ৩ মাস

খাবার বড়ি

মহিলাদের জন্য একটি নিরাপদ ও কার্যকর অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। গর্ভধারণ বন্ধ রাখতে প্রতিদিন একটি করে বড়ি খেতে হয়।

খাবার বড়ির সুবিধা

  • সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এর কার্যকারিতার হার ৯৯%
  • সহজেই পাওয়া যায় এবং খাবার নিয়মও সহজ
  • মাসিক নিয়মিত হয়
  • বড়ি খাওয়া ছেড়ে দিলে গর্ভধারণ করা যায়
  • আয়রন বড়ি সেবনে রক্ত স্বল্পতা হ্রাস পায়

খাবার বড়ি খাওয়ার নিয়ম

  • মাসিক হওয়ার প্রথম দিন থেকে একটি করে বড়ি খেতে হবে
  • একদিন বড়ি খেতে ভুলে গেলে তার পরদিন যখনই মনে পড়বে একটি বড়ি খেতে হবে এবং নির্ধারিত সময়ে আর একটি বড়ি খেতে হবে
  • পরপর দুদিন বড়ি খেতে ভুলে গেলে, পরের দুদিন দুটি করে বড়ি খেতে হবে এবং এই বড়ির পাতা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কনডম ব্যবহার করতে হবে
খাবার বড়ির অসুবিধা ও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
  • খাবার বড়ি ব্যবহারে ছোটখাট কিছু অসুবিধা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া (মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব ইত্যাদি) দেখা দিতে পারে, তবে ৩-৪ মাসের মধ্যে এসব অসুবিধা ও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া চলে যায়।

কনডম

পুরুষের জন্য একটি নিরাপদ, সহজ এবং কার্যকর অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। প্রতিবার সহবাসের সময় একটি নতুন কনডম ব্যবহার করতে হয়।

কনডম

কনডমের সুবিধা

  • নিয়মিত ও সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এর কার্যকারিতার হার ৯৭%
  • এইচআইভি/এইডস এবং অন্যকোন যৌনবাহিত রোগ ছড়ায় না, বরং প্রতিরোধ করে
  • সহবাসে কোনো অসুবিধার সৃষ্টি করে না
  • ব্যবহারের জন্য কোনো শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না
  • ব্যবহারে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই
  • সহজে এবং কম দামে পাওয়া যায়

কনডমের অসুবিধা

  • কনডম ব্যবহারে কেউ কেউ সাময়িক অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারেন। কারো কারো এলার্জি থাকতে পারে। এছাড়া তেমন কোন অসুবিধা নেই।

কনডম ব্যবহারের সঠিক নিয়ম

কনডম ব্যবহারের সঠিক নিয়ম

  • প্রতিবার সহবাসের সময় একটি নতুন কনডম উত্থিত পুরুষাঙ্গে পরতে হয়
  • কনডম পরার সময় সামনের অংশটি চেপে ধরে নিতে হবে যাতে করে বাতাস ভেতরে ঢুকে না যায়; কারণ, বাতাস ঢুকলে কনডম ফেটে যেতে পারে
  • কনডম এমনভাবে পরতে হবে যাতে সম্পূর্ণ পুরুষাঙ্গ ঢেকে যায়
  • সহবাসের শুরু থেকে বীর্যপাত হওয়া পর্যন্ত কনডম পরে থাকতে হয়
  • সহবাসের পর পুরুষাঙ্গ বের করার সময় কনডমটি সাবধানে ধরে রাখতে হয় যাতে এটি খুলে না যায়
  • সহবাসের পর উত্থিত অবস্থায় পুরুষাঙ্গ থেকে কনডমটি খুলে ফেলতে হয়
  • ব্যবহৃত কনডম কাগজে মুড়ে ডাস্টবিনে অথবা মাটিতে পুঁতে ফেলে হাত ধুতে হবে

রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

শিশুর মুখে চুষনি দেয়া যাবে কি?

শিশুর মুখে চুষনি দেয়া যাবে কি?

শিশুর মুখে চুষনি দেয়া যাবে কি?

শিশুর মুখে চুষনি (প্যাসিফায়ার) দেওয়া যায়, তবে এটি ব্যবহার করার সময় কিছু সতর্কতা এবং নিয়ম মেনে চলা উচিত। চুষনি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক রয়েছে। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো:

ইতিবাচক দিক:

১. শান্ত রাখা: চুষনি শিশুকে শান্ত করতে এবং আরাম দিতে সাহায্য করতে পারে, বিশেষত যদি সে কাঁদছে।

২. ঘুমানোর সময় নিরাপত্তা: গবেষণায় দেখা গেছে, চুষনি সিডস (SIDS - Sudden Infant Death Syndrome) এর ঝুঁকি কমাতে পারে।

৩. স্বল্প সময়ের বিকল্প: যদি শিশুর স্তন্যপান করার অভ্যাস খুব বেশি হয় এবং মা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাচ্ছেন না, তবে চুষনি সাময়িক বিকল্প হতে পারে।

নেতিবাচক দিক:

১. স্তন্যপান করার সমস্যা: নবজাতকের ক্ষেত্রে চুষনি দ্রুত দিলে স্তন্যপানের পদ্ধতিতে সমস্যা হতে পারে।

২. দাঁতের গঠন: দীর্ঘমেয়াদে চুষনি ব্যবহার শিশুর দাঁতের গঠন পরিবর্তন করতে পারে।

৩. আসক্তি: শিশুটি চুষনির প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে, যা ভবিষ্যতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

৪. সংক্রমণ ঝুঁকি: চুষনিকে পরিষ্কার না রাখলে এটি শিশুর মুখে ইনফেকশন বা অন্যান্য অসুখ সৃষ্টি করতে পারে।

সতর্কতা:

১. চুষনি অবশ্যই পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।

২. চুষনি ব্যবহারের সময় অবশ্যই পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।

৩. ৬ মাসের পর থেকে ধীরে ধীরে চুষনির ব্যবহার কমিয়ে আনার চেষ্টা করা উচিত।

৪. যদি শিশুর দাঁত ওঠা শুরু হয়, চুষনির ব্যবহার বন্ধ করা উত্তম।

অতএব, শিশুর মুখে চুষনি দেওয়া যেতে পারে, তবে এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাবা-মাকে সচেতন থাকতে হবে এবং এটি যেন দীর্ঘমেয়াদি অভ্যাসে পরিণত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।


শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

টেরিবল টু: শিশুদের দুই বছর বয়স নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা এবং এর বাস্তব চিত্র

টেরিবল টু: শিশুদের দুই বছর বয়স নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা এবং এর বাস্তব চিত্র

শিশুদের দুই বছর বয়সকে অনেকেই “টেরিবল টু” বলে অভিহিত করেন। এটি এমন একটি সময় যখন শিশুরা দ্রুত শিখছে, নিজের স্বাধীনতা দাবি করছে, এবং চারপাশের জগতকে বোঝার চেষ্টা করছে। তবে, এই বয়সকে ঘিরে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। এ ব্লগে আমরা “টেরিবল টু” ধারণাটি বিশ্লেষণ করব, এর মনস্তাত্ত্বিক ও আচরণগত দিক নিয়ে আলোচনা করব এবং পিতামাতা ও অভিভাবকদের জন্য কার্যকর পরামর্শ দেব।

টেরিবল টু: শিশুদের দুই বছর বয়স নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা এবং এর বাস্তব চিত্র

টেরিবল টু: ধারণার উত্থান ও পটভূমি

“টেরিবল টু” শব্দটি জনপ্রিয় হয়েছে শিশুদের এই বয়সে তাদের আচরণগত চ্যালেঞ্জগুলোর কারণে। ১৯৫০-এর দশক থেকে এই শব্দটি শিশুর চঞ্চলতা, আবেগের তীব্রতা, এবং নিয়মিত বিক্ষোভমূলক আচরণের বর্ণনায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দুই বছর বয়সে শিশুরা তাদের পরিচয় তৈরি করতে শুরু করে এবং সেইসঙ্গে তাদের স্বাধীন ইচ্ছার প্রকাশ ঘটে।

তবে, টেরিবল টু শুধুমাত্র নেতিবাচক নয়। এটি শিশুর স্বাভাবিক মানসিক ও শারীরিক বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটি এমন একটি সময় যখন শিশুরা তাদের আবেগ, ভাষা, এবং সামাজিক দক্ষতার বিকাশ ঘটায়।

এই বয়সে শিশুর বিকাশের বৈশিষ্ট্য

১. ভাষার উন্নয়ন:

দুই বছর বয়সে শিশুর ভাষাগত দক্ষতার দ্রুত বিকাশ ঘটে। তারা দুই বা তিনটি শব্দের বাক্য গঠন শুরু করে এবং নিজস্ব মতামত প্রকাশের চেষ্টা করে।

২. স্বাধীনতার চাহিদা:

শিশুরা এই বয়সে স্বতন্ত্রতা প্রদর্শন করতে চায়। তারা নিজেরাই কাজ করতে চায়, যেমন—খাওয়া, জামাকাপড় পরা বা খেলার ক্ষেত্রে।

৩. আবেগের তীব্রতা:

শিশুরা তাদের আবেগ প্রকাশ করতে শেখে। তবে, এই সময় তারা অনেক সময় তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, যা রাগ, কান্নাকাটি বা বিরক্তি হিসেবে প্রকাশ পায়।

৪. সীমা নির্ধারণের চেষ্টা:

শিশুরা কখনো কখনো পিতামাতার নির্দেশনা অমান্য করতে পারে। এটি তাদের নিজস্ব ইচ্ছা এবং সীমানা চিহ্নিত করার চেষ্টার অংশ।

টেরিবল টু এর আচরণগত চ্যালেঞ্জগুলো

১. রাগের বিস্ফোরণ (Temper Tantrums):

শিশুরা কোনো কিছু না পাওয়ার কারণে বা তাদের ইচ্ছা পূরণ না হলে রেগে যায়। এই রাগ প্রকাশ পায় কান্না, চিৎকার, বা মাটিতে শুয়ে পড়ার মাধ্যমে।

২. “না” বলার প্রবণতা:

দুই বছর বয়সে শিশুরা প্রায়ই “না” শব্দটি ব্যবহার করে। এটি তাদের নিজের ইচ্ছা প্রকাশের একটি মাধ্যম।

৩. ভাগাভাগি করতে না চাওয়া:

এই বয়সে শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের জিনিসপত্র ভাগাভাগি করতে চায় না। এটি তাদের ব্যক্তিসত্তার গঠনের একটি ধাপ।

৪. বিপরীতমুখী আচরণ:

কোনো কাজ করতে বললে শিশুরা ঠিক তার উল্টো কাজ করতে পারে। এটি মূলত তাদের সীমা পরীক্ষা করার প্রচেষ্টা।

টেরিবল টু-এর ইতিবাচক দিক

যদিও অনেকেই টেরিবল টুকে নেতিবাচক হিসাবে দেখেন, এটি আসলে একটি স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর বিকাশের ধাপ।

১. আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার বিকাশ:

শিশুরা ধীরে ধীরে শিখতে শুরু করে কীভাবে তাদের আবেগ পরিচালনা করতে হয়।

২. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা:

শিশুরা স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে এবং সমাধান খুঁজতে চেষ্টা করে।

৩. মানসিক স্থিতিশীলতা:

এই বয়সে শিশুরা নিরাপত্তার ধারণা গড়ে তোলে, যা তাদের ভবিষ্যত আচরণকে প্রভাবিত করে।

পিতামাতার জন্য কার্যকর পরামর্শ

টেরিবল টু মোকাবিলায় পিতামাতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১. ধৈর্য ধরুন:

শিশুর আচরণ স্বাভাবিক এবং সাময়িক। তাদের প্রতি ধৈর্যশীল হোন এবং বুঝার চেষ্টা করুন।

২. সীমা নির্ধারণ করুন:

শিশুদের জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করুন এবং তাদের সেই নিয়মের মধ্যে পরিচালিত করতে সাহায্য করুন।

৩. বিকল্প দিন:

শিশুরা অনেক সময় স্বাধীনতা চায়। তাদের বিকল্প দিন—যেমন, “তুমি কি এই খেলনাটা চাও, না অন্যটা?”

৪. ইতিবাচক ব্যবহার পুরস্কৃত করুন:

শিশু যখন ভালো আচরণ করে, তখন তাদের প্রশংসা করুন। এটি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে।

৫. সময় দিন:

আপনার শিশুকে যথেষ্ট সময় দিন এবং তার সঙ্গে খেলুন। এটি তাদের মানসিক স্থিতিশীলতায় সহায়তা করবে।

মিথ এবং বাস্তবতা

মিথ: টেরিবল টু শুধুই একটি কঠিন সময়।

বাস্তবতা: এটি শিশুর শারীরিক, মানসিক, এবং আবেগীয় বিকাশের একটি প্রয়োজনীয় ধাপ।


মিথ: শিশুরা এই বয়সে খুব “বেগারামি” করে।

বাস্তবতা: শিশুরা তাদের স্বাধীনতা প্রকাশ করার চেষ্টা করছে।


মিথ: শিশুর রাগ দেখানো মানে তারা খারাপ স্বভাবের।

বাস্তবতা: এটি তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ শেখার প্রাথমিক ধাপ।

টেরিবল টু: শিশুদের দুই বছর বয়স নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা এবং এর বাস্তব চিত্র

শেষ কথা 

টেরিবল টু কোনও সমস্যা নয়, বরং এটি শিশুর জীবনের একটি স্বাভাবিক ধাপ। এই সময়ে পিতামাতা এবং অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া, ধৈর্যশীল থাকা এবং ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করা।

টেরিবল টুকে সঠিকভাবে পরিচালনা করলে এটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করবে এবং একটি সুস্থ ভবিষ্যতের ভিত্তি তৈরি করবে।

তথ্যসূত্র 

1. Berk, L. E. (2013). Child Development. Pearson Education.

2. Kohn, A. (2005). Unconditional Parenting. Atria Books.

3. Siegel, D. J., & Bryson, T. P. (2012). The Whole-Brain Child. Delacorte Press.

4. American Academy of Pediatrics (AAP). (2020). "Parenting at 2 Years."

5. Harvard Center on the Developing Child. (2016). “Understanding Early Childhood Development.”

6. UNICEF. (2021). "Supporting Young Children’s Emotional Growth."

7. National Institute of Child Health and Human Development (NICHD). (2019).

8. Brazelton, T. B., & Sparrow, J. D. (2003). Touchpoints: Birth to Three.

বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৪

নবজাতকের দাঁত: যত্ন ও তথ্য

নবজাতকের দাঁত: যত্ন ও তথ্য

নবজাতকের দাঁত নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। দাঁত গজানো একটি স্বাভাবিক এবং গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। যদিও নবজাতকের জন্মের সময় সাধারণত দাঁত দেখা যায় না, কিছু শিশুর ক্ষেত্রে জন্ম থেকেই দাঁতের অস্তিত্ব থাকতে পারে। এটি "নাটাল টিথ" বা জন্ম দাঁত নামে পরিচিত। এটি খুবই বিরল এবং নবজাতকদের মাত্র ১-২% ক্ষেত্রে দেখা যায়।

এই দাঁতগুলো নবজাতকের মুখের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করে।

নবজাতকের দাঁত এবং এটির যত্ন সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরি, যাতে শিশুর সামগ্রিক মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

নবজাতকের দাঁত: যত্ন ও তথ্য

নবজাতকের দাঁতের গঠন

শিশুর দাঁত গর্ভাবস্থার প্রায় ৬ষ্ঠ সপ্তাহ থেকেই মাড়ির ভেতরে গঠন শুরু হয়। তবে দাঁত সাধারণত জন্মের পর ৬ থেকে ১২ মাস বয়সে মাড়ি ফেটে বের হয়। এই সময়টাকে "টিথিং" (Teething) বলা হয়। কিন্তু কিছু শিশুর ক্ষেত্রে, জন্মের সময়ই এক বা একাধিক দাঁত দেখা যায়। এগুলোকে নাটাল টিথ বলা হয়।


এটা কি কোন সমস্যা?

নাটাল টিথ সাধারণত অস্বাভাবিক নয়, তবে এটি কখনো কখনো অস্বস্তি বা সমস্যার কারণ হতে পারে। যেমন:

  • মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় ব্যথা।
  • দাঁতের শেকড় দুর্বল থাকলে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি।
  • মাড়িতে ক্ষত সৃষ্টি।

দাঁত গজানোর লক্ষণ

নবজাতকের দাঁত গজানোর সময় কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এগুলো হলো:

  • লাল ও ফোলা মাড়ি: মাড়ি ফুলে যায় এবং স্পর্শ করলে ব্যথা হয়।
  • বেশি লালা ঝরা: টিথিং-এর সময় শিশুর মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা বের হয়।
  • মাড়ি কামড়ানোর প্রবণতা: দাঁত বের হওয়ার চাপে শিশুরা মাড়ি কামড়াতে চায়।
  • জ্বর বা অস্বস্তি: কিছু ক্ষেত্রে শিশুর হালকা জ্বর বা বিরক্তিভাব দেখা যায়।
  • খিটখিটে মেজাজ: অস্বস্তির কারণে শিশুরা বিরক্ত হতে পারে।

নবজাতকের দাঁতের যত্নের উপায়

দাঁত এবং মাড়ির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অনুসরণ করা উচিত:

  • মাড়ি পরিষ্কার রাখা: শিশুর মাড়ি নরম এবং পরিষ্কার কাপড় বা গজ দিয়ে নিয়মিত মুছে দিন।
  • মাড়ি ম্যাসাজ: মাড়ির ব্যথা কমানোর জন্য পরিষ্কার আঙুল দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন।
  • ঠান্ডা টিথিং রিং ব্যবহার: ব্যথা বা অস্বস্তি কমানোর জন্য টিথিং রিং কার্যকর হতে পারে।
  • ডেন্টিস্টের পরামর্শ: নাটাল টিথ বা অন্য কোনো জটিলতা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিন।
  • সঠিক খাদ্য গ্রহণ: শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করুন।

নাটাল টিথের সমস্যা সমাধান

যদি নবজাতকের নাটাল টিথের কারণে সমস্যা দেখা দেয়, তবে এটি সরানোর প্রয়োজন হতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়। নাটাল টিথ থাকলে শিশুর খাওয়ানোর পদ্ধতি কিছুটা বদলানো যেতে পারে।

নবজাতকের দাঁতের বিকাশ

প্রথম দাঁত গজানোর পর থেকে ৩ বছর বয়সের মধ্যে শিশুর মোট ২০টি দুধ দাঁত বের হয়। এগুলোর সঠিক যত্ন নেওয়া ভবিষ্যতে স্থায়ী দাঁতের জন্য একটি মজবুত ভিত্তি তৈরি করে।

শেষ কথা

নবজাতকের দাঁত নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা না করে সঠিক তথ্য জানুন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। দাঁতের স্বাস্থ্য সঠিকভাবে রক্ষা করলে শিশুর সুন্দর হাসি ও সুস্থ দাঁতের বিকাশ নিশ্চিত হবে।

_______________________________________________________________________________

তথ্যসূত্র 

1. American Academy of Pediatrics (AAP):
Infant oral health guidelines and management during teething.
AAP Official Website

2. Mayo Clinic:
Comprehensive guide to teething symptoms and care.
Mayo Clinic Official Site

3. Cleveland Clinic:
Teething in infants: Common signs and remedies.
Cleveland Clinic

4. World Health Organization (WHO):
Oral health and care guidelines for children.
WHO Oral Health Information

5. American Dental Association (ADA):
Managing natal teeth and teething pain.
ADA Website

6. PubMed Research Articles:
Studies on natal teeth prevalence and management.
PubMed

মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

ল্যানুগো: নবজাতকের শরীরে সূক্ষ্ম লোমের রহস্য

ল্যানুগো: নবজাতকের শরীরে সূক্ষ্ম লোমের রহস্য

ল্যানুগো কী?

ল্যানুগো (Lanugo) হলো নবজাতকের শরীরে জন্মের সময় থাকা এক ধরনের সূক্ষ্ম এবং নরম লোম। এটি দেখতে অনেকটা পশমের মতো, যা সাধারণত শিশুর কপাল, গাল, পিঠ, এবং কাঁধের উপরে দেখা যায়। এটি শিশুদের গর্ভে থাকার সময় বৃদ্ধি পায় এবং তাদের ত্বকের উপর একটি প্রাকৃতিক সুরক্ষার স্তর হিসেবে কাজ করে। যদিও এই লোম জন্মের পর বেশিরভাগ সময় নিজে থেকে পড়ে যায়, তবে অনেকেই একে দেখে বিস্মিত হন এবং এটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকে।

ল্যানুগো: নবজাতকের শরীরে সূক্ষ্ম লোমের রহস্য

ল্যানুগো কেন তৈরি হয়?

ল্যানুগো শিশুর ত্বককে গর্ভাশয়ে থাকার সময় এমনিওটিক ফ্লুইড থেকে রক্ষা করে। এটি গর্ভাবস্থার ১৮-২০ সপ্তাহের মধ্যে বিকাশ লাভ করে এবং শিশুর পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এটি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে এবং উষ্ণতা ধরে রাখতে সাহায্য করে, যা গর্ভাবস্থায় শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ল্যানুগো কি নবজাতকের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?

হ্যাঁ, ল্যানুগো নবজাতকের জন্য প্রাকৃতিকভাবে উপকারী। এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বককে বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান থেকে সুরক্ষা দেয়। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি নবজাতকের ত্বককে শুষ্কতা ও অস্বস্তি থেকে রক্ষা করতে ভূমিকা রাখে।

ল্যানুগো কখন পড়ে যায়?

ল্যানুগো সাধারণত নবজাতকের জন্মের কয়েক সপ্তাহ পর পড়ে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি কয়েক মাস পর্যন্ত থেকে যেতে পারে। শিশুর বড় হওয়ার সাথে সাথে এই সূক্ষ্ম লোমগুলো পড়ে যেতে থাকে এবং পরবর্তী সময়ে এগুলো আর থাকে না।

ল্যানুগো নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ কি?

ল্যানুগো সাধারণত স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া এবং এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে যদি ল্যানুগো বেশি পরিমাণে থাকে এবং বেশিদিন থেকে যায়, তবে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা যেতে পারে। কখনো কখনো এটি হরমোনের সমস্যার কারণেও হতে পারে, যা চিকিৎসার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়।

ল্যানুগো এবং সামাজিক কুসংস্কার

অনেক সময় ল্যানুগো নিয়ে সামাজিক কুসংস্কারের কারণে মা-বাবারা উদ্বিগ্ন হন। অনেকে মনে করেন, শিশুর শরীরে অতিরিক্ত লোম থাকলে তা স্বাস্থ্য সমস্যা নির্দেশ করে। তবে এটা আসলে সত্য নয়; বরং এটি একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় অবস্থা।

সূত্রঃ 

1. DiGiulio, D. B. (2020). "Lanugo: What It Is and Why It Happens." Healthline. Available at: https://www.healthline.com

2. Stern, L., & Murphy, B. (2019). Pediatric Dermatology: A Quick Reference Guide. American Academy of Pediatrics.

3. Harden, J. (2021). "Newborn's Lanugo Hair: Function and When It Falls Off." Verywell Family. Available at: https://www.verywellfamily.com

সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

মঙ্গোলিয়ান স্পট: একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

মঙ্গোলিয়ান স্পট: একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

মঙ্গোলিয়ান স্পট (Mongolian Spot) হলো নবজাতকদের ত্বকে দেখা দেওয়া এক ধরনের নীলাভ দাগ, যা সাধারণত জন্মের সময় বা জন্মের পরপরই উপস্থিত হয়। এটি ত্বকের নিচে কিছু নির্দিষ্ট ধরনের রঙ্গক (পিগমেন্ট) কোষের উপস্থিতির কারণে ঘটে। মঙ্গোলিয়ান স্পট সাধারণত ক্ষতিকর নয় এবং কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, কারণ সময়ের সাথে সাথে এই দাগ প্রায়ই অদৃশ্য হয়ে যায়।

মঙ্গোলিয়ান স্পট: একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

মঙ্গোলিয়ান স্পটের কারণ

মঙ্গোলিয়ান স্পটের কারণ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে এটি ত্বকের মেলানোসাইট নামক কোষগুলির কারণে হয়। মেলানোসাইট কোষগুলি ত্বকে মেলানিন উৎপাদন করে, যা আমাদের ত্বক, চুল এবং চোখের রঙ নির্ধারণ করে। যখন এই কোষগুলি ত্বকের গভীরে জমা হয়, তখন ত্বকের উপরে নীলাভ বা ধূসরাভ দাগের মতো দেখা যায়।

কারা এই দাগ বেশি পায়?

মঙ্গোলিয়ান স্পট সাধারণত এশিয়ান, আফ্রিকান এবং লাতিন আমেরিকান বংশোদ্ভূত নবজাতকদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। ইউরোপীয় বংশোদ্ভূতদের মধ্যে এই দাগ খুবই বিরল। এটি জেনেটিক কারণেও হতে পারে। মঙ্গোলিয়ান স্পটের অবস্থান সাধারণত পিঠের নিচের অংশ বা নিতম্বে হয়, তবে এটি শরীরের অন্যান্য অংশেও থাকতে পারে।

মঙ্গোলিয়ান স্পটের বৈশিষ্ট্য

১. রং: মঙ্গোলিয়ান স্পটের রং সাধারণত নীলাভ, ধূসর বা কালচে হয়।

২. আকার ও আকৃতি: এগুলো গোল বা অনিয়মিত আকৃতির হতে পারে। 

৩. স্থান: এই দাগগুলি সাধারণত কোমর, নিতম্ব বা পিঠের নিচের দিকে বেশি দেখা যায়। 

৪. অদৃশ্য হওয়া: সাধারণত ৪-৫ বছর বয়সের মধ্যে এই দাগগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি কিশোর বা প্রাপ্তবয়স্ক বয়সেও থেকে যেতে পারে।

মঙ্গোলিয়ান স্পটের চিকিৎসা ও প্রভাব

মঙ্গোলিয়ান স্পটের জন্য সাধারণত কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, কারণ এটি কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি করে না। চিকিৎসকেরা এটিকে স্বাভাবিক মনে করেন এবং সাধারণত এই ধরনের দাগকে জন্ম চিহ্ন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তবে যদি দাগটি বিশাল আকারে বৃদ্ধি পায় বা অন্যান্য জটিলতার লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সামাজিক ভুল ধারণা ও সচেতনতা

মঙ্গোলিয়ান স্পট নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক ভুল ধারণা থাকে। অনেকেই মনে করেন এটি আঘাতজনিত কারণে হয়েছে। এজন্য নবজাতকদের অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার।

মঙ্গোলিয়ান স্পট: একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

উপসংহার

মঙ্গোলিয়ান স্পট সাধারণত ত্বকের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য এবং এটি ক্ষতিকর নয়। এটি সময়ের সাথে নিজে থেকেই অদৃশ্য হয়ে যায় এবং শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি বা স্বাস্থ্যের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। এর সম্পর্কে সচেতন থাকলে পরিবারের মধ্যে ভুল ধারণা বা অপ্রয়োজনীয় উদ্বেগ এড়ানো যায়।

সূত্রঃ 

1. "Mongolian Spot" - National Library of Medicine.

2. "Dermal Melanocytosis (Mongolian Spot)" - American Academy of Dermatology.

3. Leung, A.K., Kao, C.P., and Leo, J.T. (2007). "Mongolian Spots: Epidemiology, Morphology, and Sociocultural Relevance." Pediatrics in Review.

4. Harnisch, J.P., & Boronow, C. (1981). "Mongolian Spots and Assoc

iated Conditions." Clinical Pediatrics.




বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৪

গর্ভাবস্থায় বিপদ চিহ্ন ও প্রতিরোধের উপায়

গর্ভাবস্থায় বিপদ চিহ্ন ও প্রতিরোধের উপায়

গর্ভাবস্থা একজন মায়ের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। গর্ভাবস্থার স্বাভাবিক কিছু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা ছাড়া গর্ভবতী মায়েদের খুব কম ক্ষেত্রেই জটিলতা দেখা দেয়।

তবে কিছু বিশেষ লক্ষণ নিয়ে আপনার আগে থেকেই জেনে নেওয়া দরকার। কারণ এসব লক্ষণ আপনার ও আপনার গর্ভের শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা গেলে তাৎক্ষণিক আপনার চিকিৎসার প্রয়োজন হবে।

এসব লক্ষণকে গর্ভাবস্থার বিপদ চিহ্ন বলা হয়। এ লক্ষণগুলো জানা থাকলে মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছানোর আগেই চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হবে এবং গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করা যাবে।

গর্ভাবস্থায় বিপদ চিহ্ন ও প্রতিরোধের উপায়

গর্ভাবস্থার বিপদ চিহ্নসমূহ

বিপদ চিহ্নসমূহ গর্ভাবস্থার বেশ কিছু বিপদ চিহ্ন রয়েছে। আপনি যদি বর্তমানে গর্ভবতী হোন কিংবা সম্প্রতি গর্ভবতী হয়ে থাকেন, তবে এ লক্ষণগুলির ব্যাপারে বিশেষ নজর রাখতে হবে:

১. রক্তস্রাব: 

গর্ভাবস্থার যেকোনো সময়ে যোনিপথে রক্তপাত হওয়া, বিপদচিহ্ন নির্দেশ করে।
যেমনঃ-

আপনি যদি গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে যোনিপথে রক্তপাতের পাশাপাশি মাসিকের ব্যথার মতো ব্যথা তীব্রভাবে অনুভব করেন এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, তবে সেটি এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি বা জরায়ুর বাইরের গর্ভধারণের লক্ষণ হতে পারে।

প্রথম ত্রৈমাসিকের শেষের দিকে কিংবা দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের শুরুর দিকে পেট ব্যথাসহ রক্তপাত গর্ভপাত এর লক্ষণ হতে পারে।

তৃতীয় ত্রৈমাসিকে রক্তপাত প্লাসেন্টাল এবরাপশন এর কারণে হতে পারে। যার ফলে প্রসবের আগেই আপনার প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল আলাদা হয়ে যায়। এর ফলে গর্ভের শিশু মায়ের শরীর থেকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পায় না। 

২. খিঁচুনি: 

গর্ভাবস্থা, প্রসবের সময় কিংবা প্রসবের পর খিঁচুনি হওয়া আপনার জন্য বিপদ চিহ্ন। খিঁচুনি এক্লাম্পসিয়ার প্রধান লক্ষণ। এক্লাম্পসিয়া গর্ভাবস্থার মারাত্মক একটি জটিলতা। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে এতে মা ও শিশু উভয়েরই ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

৩. মাথা ব্যথা ও ঝাপসা দেখা: 

গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় আপনার মাথা ব্যথা হলে যদি সেটি আপনার কাছে খুব তীব্র মনে হয় এবং মাথা ব্যথার চিকিৎসা নেওয়ার পরও যদি তা না সারে কিংবা সময়ের সাথে সাথে আরও খারাপ হতে থাকে, তাহলে এটিও একটি বিপজ্জনক অবস্থা নির্দেশ করতে পারে।

মাথা ব্যথার পাশাপাশি চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ঘুরানো ও শরীরে পানি আসার মতো সমস্যাও হতে পারে। এ ধরনের তীব্র মাথা ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা ও শরীরে পানি আসা প্রি-এক্লাম্পসিয়ার অন্যতম লক্ষণ। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না নিলে এর থেকে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে।

৪. ভীষণ জ্বর: 

গর্ভাবস্থায় আপনার জ্বর হলে, অর্থাৎ আপনার শরীরের তাপমাত্রা ১০০.৪° ফারেনহাইট বা ৩৮°সেন্টিগ্রেডের উপরে হলে, এটিও একটি বিপদ চিহ্ন। গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পর পর একটানা তিন দিনের বেশি জ্বর থাকলে কিংবা যোনিপথে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব নিঃসৃত হলে তা সাধারণত শরীরে কোনো ধরনের ইনফেকশনের উপস্থিতি নির্দেশ করে। গর্ভাবস্থায় জ্বর মা ও শিশু উভয়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

কিছু গবেষণা থেকে দেখা যায়, গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে তা গর্ভপাত বা মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় আবার গর্ভাবস্থার ১৬ সপ্তাহ পর্যন্ত জ্বরের সাথে গর্ভপাত বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গর্ভাবস্থার প্রথমদিকে জ্বর আসার সাথে গর্ভের শিশুর কিছু জন্মগত ত্রুটি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে।

গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে বা ১২তম সপ্তাহের পর জ্বর আসলে গর্ভের শিশুর অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। গর্ভাবস্থার এই সময়ের পর তিনবার বা তার বেশি জ্বর আসলে এই ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যেতে পারে।
কিছু কিছু গবেষণায় এসব প্রমাণ পাওয়া গেলেও আবার কিছু গবেষণায় গর্ভাবস্থায় জ্বরের সাথে এসব জটিলতার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই এ বিষয়ে আরও গবেষণার অবকাশ রয়েছে।

তবে যেকোনো ক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থায় জ্বর আসলে দ্রুত তা কমানোর ব্যবস্থা করা ও সময়মতো ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এতে করে গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর জ্বরের কারণে কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা এড়ানো সম্ভব হবে।

৫. বিলম্বিত প্রসব: 

আপনার প্রসবের ব্যথা যদি ১২ ঘন্টার বেশি থাকে তাহলে একে বিলম্বিত প্রসব বলে। বিলম্বিত প্রসবও একটি বিপদ চিহ্ন। বিলম্বিত প্রসবের সময় মাথা ছাড়া বাচ্চার অন্য যেকোনো অঙ্গ প্রথমে বের হতে পারে। বিলম্বিত প্রসব হলে জন্মের পর শিশুর শ্বাসকষ্ট ও খিঁচুনি হতে পারে।

অন্যান্য লক্ষণ: 

উপরের বিপদ চিহ্নগুলোর পাশাপাশি নিচের উপসর্গগুলির ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবেঃ-
  • মাথা ঘোরা বা জ্ঞান হারানো
  • ডেলিভারির সম্ভাব্য দিনের আগেই পানি ভেঙে যাওয়া
  • অতিরিক্ত বমি হওয়া এবং একদমই খেতে না পারা
  • গর্ভের শিশুর নড়াচড়া কমে যাওয়া বা একদমই নড়াচড়া না হওয়া
  • আপনার হাত বা মুখমণ্ডল অত্যধিক ফুলে যাওয়া বা শরীরে পানি আসা
  • শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া
  • বুকে ব্যথা কিংবা বুক ধড়ফড় করা

অতিরিক্ত ক্লান্তি গর্ভকালীন সময়ের পাশাপাশি সন্তান প্রসবের পরও মায়ের শারীরিক অবস্থার দিকে লক্ষ রাখা জরুরি। প্রসবের পর নিচের উপসর্গগুলির দিকে লক্ষ রাখুনঃ

  • প্রসবের পর যোনি থেকে ভারী রক্তপাত বা স্রাব নিঃসরণ
  • ডিপ্রেশন
  • স্তনের বোঁটায় ফাটল ধরা বা লাল হয়ে যাওয়া

প্রতিরোধের উপায়ঃ

গর্ভাবস্থার বিপদ চিহ্নগুলো হয়তো সবসময় আগে থেকে টের পাওয়া সম্ভব নয়। তবে গর্ভাবস্থায় নিচের সহজ পরামর্শগুলো মেনে চললে এসব বিপদ চিহ্ন থেকে আপনি অনেকটাই নিরাপদ থাকতে পারবেন।

১. নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করান: 

গর্ভাবস্থায় আপনার ও আপনার গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের জন্য নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা খুবই প্রয়োজনীয়। গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩০ সপ্তাহে বা ৭ মাসে ন্যূনতম প্রতি মাসে একবার এবং ৩০ সপ্তাহের পর প্রতি সপ্তাহে একবার করে আপনার ডাক্তার দেখানো উচিত।


গর্ভাবস্থায় বিপদ চিহ্ন ও প্রতিরোধের উপায়

প্রতি চেকআপে ডাক্তার আপনার ওজন, রক্তশূন্যতা, পায়ে পানি আসা, রক্তচাপ এবং গর্ভের ভেতরে শিশুর পজিশন বা অবস্থান নিশ্চিত করবেন। সেই সাথে আপনার যদি গর্ভকালীন কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা (যেমন: গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, প্রি-এক্লাম্পসিয়া) থেকে থাকে, চিকিৎসক সেগুলো চিহ্নিত করতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

২. সুষম খাবার গ্রহণ করুন: 

গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি পরিমাণ খাবার দরকার হয়। কারণ এসময় আপনার পাশাপাশি আপনার গর্ভের শিশুর পুষ্টিও আপনার উপর নির্ভরশীল। গর্ভাবস্থায় সুষম খাবার গ্রহণ করুন।

নিয়মিত বিরতিতে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাবেন। প্রয়োজনে দৈনিক তিনবেলা বেশি করে খাবার না খেয়ে, অল্প অল্প করে ছয় বার খান। অথবা দৈনিক তিনবার খাওয়ার পাশাপাশি ক্ষুধা লাগলে পরিমিত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ও হালকা নাস্তা খেতে পারেন।

এ ছাড়া অবশ্যই সকালে ঠিকমতো নাস্তা খাওয়ার চেষ্টা করবেন। রাতে ঘুমানোর আগে কোনো হালকা খাবার খেয়ে নিবেন। এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ খেয়ে ঘুমাতে যেতে পারেন। দুধ ভালো ঘুমে সাহায্য করে।

এর পাশাপাশি প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন, ফলিক এসিড, আয়রন, প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম এর সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।

৩. সময়মতো ধনুষ্টংকার বা টিটেনাস এর টিকা গ্রহণ করুন: 

আপনার ডেলিভারির সময়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গর্ভাবস্থায় টিটি বা টিটেনাস টিকা নেওয়া প্রয়োজন। তবে আগে থেকে টিটেনাসের ৫টি টিকার ডোজ সম্পন্ন থাকলে আর গর্ভাবস্থায় এই টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

আগে যদি কোনো ডোজ না নিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ৫ মাসের পর ১ মাসের ব্যবধানে পর পর দুটি টিটি টিকা নিন। আর যদি পূর্বে দুই ডোজ টিকা নেওয়া থাকে তাহলে প্রতি গর্ভাবস্থায় মাত্র একটি বুস্টার ডোজ নিন। আপনার ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী এ বিষয়ে আপনাকে সাহায্য করতে পারবেন।

৪. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: 

গর্ভাবস্থায় যেকোনো ভারী কাজ এড়িয়ে চলুন। গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া খুবই জরুরি। রাতে অন্তত ৭–৯ ঘণ্টা ভালোমতো ঘুমানোর চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে দিনের বেলাও কমপক্ষে এক ঘন্টা বিশ্রাম নিতে পারেন।

ঘুমের একটি রুটিন মেনে চলুন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন। খুব বেশি অথবা খুব কম না ঘুমিয়ে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। 

৫. পূর্বের স্বাস্থ্য সমস্যা বা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন: 

আপনার আগে থেকেই ছিল এমন কিছু অসুখ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে গর্ভাবস্থায় জটিলতা তৈরি করতে পারে। যেমনঃ উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, এইডস অথবা যৌনবাহিত অন্য কোনো রোগ অটোইমিউন রোগ ইত্যাদি।

দৈনন্দিন কাজ ও অভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে এসব রোগ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে গর্ভাবস্থায় জটিলতা কমানো সম্ভব। 

৬. প্রসব কালীন খরচের জন্য সঞ্চয় করুন: 

গর্ভাবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতার কারণে আপনার অতিরিক্ত খরচও হতে পারে। এজন্য আগে থেকেই প্রসবকালীন খরচের জন্য সঞ্চয় করুন।

৭. প্রয়োজনে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা রাখুন: 

গর্ভাবস্থায় এসব বিপদ চিহ্ন দেখা গেলে সাথে সাথে আপনার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। কাজেই আগে থেকে আপনার নিকটস্থ হাসপাতালে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত যানবাহন ঠিক করে রাখুন।

লিখেছেনঃ ডা. সাবরিনা মনসুর

বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৪

শব্দ দূষণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি

শব্দ দূষণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি

শব্দ দূষণ আধুনিক নগরায়ন ও শিল্পায়নের অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা যা মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে গুরুতর প্রভাব ফেলছে। শব্দ দূষণ বলতে বোঝায় এমন উচ্চমাত্রার ও অবাঞ্ছিত শব্দ যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি মূলত যানবাহন, কলকারখানা, নির্মাণ কাজ, সঙ্গীতের উচ্চস্বরে বাজানো ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি থেকে উৎপন্ন হয়।

শব্দ দূষণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি

শব্দ দূষণের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব হল শ্রবণ ক্ষমতার হ্রাস। দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চমাত্রার শব্দের সংস্পর্শে থাকার ফলে কানের কোষ ও শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষত, যারা শিল্পাঞ্চলে কাজ করেন বা ব্যস্ত সড়কে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করেন, তারা এই ঝুঁকিতে বেশি পড়েন। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৮৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ পর্যায়ক্রমে শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাসের কারণ হতে পারে।

শুধু শ্রবণ ক্ষতিই নয়, শব্দ দূষণ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে। দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চমাত্রার শব্দে থাকার ফলে শরীরের করটিসল হরমোনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়, যা স্ট্রেসের একটি প্রধান কারণ। এর ফলে অনিদ্রা, মাইগ্রেন ও উচ্চ রক্তচাপের মত স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনিদ্রা মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্মের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, একাগ্রতা কমিয়ে দেয় এবং সামগ্রিক জীবনের গুণগত মান হ্রাস করে।

শব্দ দূষণ বিশেষভাবে শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। শিশুদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি তারা নিয়মিত উচ্চ মাত্রার শব্দের মধ্যে বড় হয়, তাহলে তাদের শেখার ক্ষমতা ও একাগ্রতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি স্কুলের পড়াশোনা ও সামাজিক মেলামেশার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

শব্দ দূষণের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হিসেবে হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে। উচ্চমাত্রার শব্দে হৃদপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালন ও হৃদযন্ত্রের কার্যক্রমে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই ধরনের শারীরিক প্রতিক্রিয়া সময়ের সাথে হৃদরোগ, অ্যারিথমিয়া, এমনকি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।

এছাড়া, শব্দ দূষণ কর্মস্থলে উৎপাদনশীলতাও কমিয়ে দিতে পারে। ক্রমাগত উচ্চমাত্রার শব্দ কর্মীদের মনোযোগ নষ্ট করে, তাড়াহুড়া সৃষ্টি করে এবং ভুলের পরিমাণ বাড়ায়। এর ফলে কাজে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও মানের অবনতি ঘটে।

শব্দ দূষণ প্রতিরোধে ব্যক্তিগত ও সামাজিক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। যেমন, যানবাহনের শব্দ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ নিয়ম মানা, নির্মাণ কাজের সময় নির্দিষ্ট শব্দসীমা বজায় রাখা, এবং গার্হস্থ্য যন্ত্রপাতির ব্যবহার সীমিত করা উচিত। একইসাথে, সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে শব্দ দূষণ কমাতে প্রয়োজনীয় নীতি গ্রহণ এবং কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।

সর্বোপরি, শব্দ দূষণ একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা যা মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করে। এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং একযোগে কাজ করতে হবে। সুষ্ঠু ও সুস্থ জীবনযাপনের জন্য শব্দ দূষণ প্রতিরোধে উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪

ফ্রিজে খাবার কতক্ষণ সংরক্ষণ করা নিরাপদ?

ফ্রিজে খাবার কতক্ষণ সংরক্ষণ করা নিরাপদ?

ফ্রিজে খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা খাবারের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বজায় রাখা এবং খাবার নিরাপদ রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বিভিন্ন ধরনের খাবার সংরক্ষণের বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো:

ফ্রিজে খাবার কতক্ষণ সংরক্ষণ করা নিরাপদ?

১. পাকা ও রান্না করা খাবার

  • সুপ ও স্টু: ৩-৪ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে।
  • রোস্ট বা মাংসের টুকরো: ৩-৫ দিন সংরক্ষণ করা যায়।
  • পাস্তা বা স্যালাড: ৩-৫ দিন ভালো থাকে।
  • পিজা: ৩-৪ দিন পর্যন্ত নিরাপদ।

২. কাঁচা মাংস ও সামুদ্রিক খাবার

  • মুরগি ও টার্কি: ১-২ দিনের মধ্যে রান্না করা উচিত।
  • গরুর মাংস, খাসির মাংস, বা পর্ক চপস: ৩-৫ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে।
  • কাঁচা মাছ ও শেলফিশ: ১-২ দিনের বেশি রাখা উচিত নয়।

৩. ডেইরি পণ্য

  • পাস্তুরিত দুধ: সাধারণত ৫-৭ দিন ভালো থাকে। যদি খোলার পর কোনো গন্ধ বা স্বাদে পরিবর্তন দেখা যায়, তবে তা ফেলে দেওয়া উচিত।
  • পনির: সফট চিজ (যেমন কটেজ চিজ, রিকোটা) ১-২ সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে, আর হার্ড চিজ (যেমন চেডার, পারমেজান) ৩-৪ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে সংরক্ষণ করা যায়।
  • মাখন: ফ্রিজে ১ মাস বা ফ্রিজারে ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
৪. ফল ও সবজি
  • পাতাযুক্ত সবজি: ১ সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে।
  • গাজর, ব্রকলি, এবং শিম: ১-২ সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে।
  • বেরি জাতীয় ফল (স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি): ৩-৭ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে।
  • আপেল: ৩-৪ সপ্তাহ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
৫. ডিম ও অন্যান্য খাদ্য
  • ডিম: ৩-৫ সপ্তাহ পর্যন্ত ফ্রিজে নিরাপদে রাখা যায়।
  • ডিমের সাদা অংশ বা কুসুম (আলাদা অবস্থায়): ২-৪ দিনের মধ্যে খাওয়া উচিত।
  • পাকা ডিম: ১ সপ্তাহের মধ্যে খেয়ে ফেলা উচিত।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
  • ফ্রিজের তাপমাত্রা সর্বদা ৪°C (৪০°F) বা তার নিচে রাখা উচিত।
  • খাবার সংরক্ষণ করার আগে অবশ্যই তা ভালোভাবে ঠাণ্ডা হতে দিন, তবে ২ ঘণ্টার বেশি ঘরের তাপমাত্রায় না রাখাই ভালো।
  • প্যাকেজিং বা মোড়ক ব্যবহার করলে তা বায়ুরোধী ও ফ্রিজ-নিরাপদ হওয়া উচিত।

এভাবে সঠিক নির্দেশনা মেনে চললে, খাবার নিরাপদে সংরক্ষণ করা সম্ভব এবং খাদ্যবাহিত রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।


রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৪

০-৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর খাবার

০-৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর খাবার

০-৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর জন্য সেরা এবং একমাত্র আদর্শ খাবার হলো মায়ের বুকের দুধ। এই সময়ের মধ্যে শিশুর জন্য মায়ের দুধের বিকল্প কোনো খাবারের প্রয়োজন হয় না, কারণ এতে শিশুর প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান এবং জলীয় পদার্থ থাকে যা শিশুকে সুস্থ রাখে ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

যদি কোনো কারণে মায়ের বুকের দুধ দেয়া সম্ভব না হয়, তাহলে শিশু-ফর্মুলা দুধ ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী দেয়া যেতে পারে। তবে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে কোনো ধরনের সলিড খাবার, গরুর দুধ, মধু বা অন্যান্য তরল খাবার দেওয়া উচিত নয়।

০-৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর খাবার

মায়ের বুকের দুধের উপকারিতা:

  • পুষ্টিকর: শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান এতে রয়েছে।
  • ইমিউনিটি বৃদ্ধি: মায়ের দুধে থাকা অ্যান্টিবডি শিশুকে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
  • সহজপাচ্য: বুকের দুধ সহজে হজম হয় এবং শিশুর পেটে গ্যাস বা অন্যান্য সমস্যা তৈরি করে না।
  • বন্ডিং: স্তন্যদান মায়ের সাথে শিশুর মানসিক বন্ধন বাড়ায়।


 

বুকের দুধ খাওয়ানোর টিপস:

  • শিশুকে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে প্রথমবারের মতো বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত।
  • প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ দেয়া উচিত, কোনোরকম পানি বা অন্য খাবার নয়।
  • শিশুকে চাহিদা অনুযায়ী (on-demand) দুধ খাওয়ানো উচিত, দিনে ও রাতে প্রয়োজন অনুযায়ী।
  • এই সময় মায়ের পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মায়ের খাদ্যাভ্যাস সরাসরি দুধের গুণগত মানের উপর প্রভাব ফেলে।


শিশুর ইপিআই টিকার সময়সূচি

ইপিআই কর্মসূচি অনুযায়ী শিশুর জন্য অত্যাবশ্যকীয় টিকাগুলোর শিডিউল বা সময়সূচি জেনে নিন। নিজে জানুন, অন্যকে জানান ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। কৃতজ্ঞতা: ইউনিসেফ বাংলাদেশ #healthcare #tips #epi #vaccine #vaccination #VaccinesSaveLives #childhood #children #childcare

 

নবজাতক শিশু কেন দিনে ঘুমায় আর রাতে জেগে থাকে?

নবজাতক শিশুদের ঘুমের ধরণ প্রাথমিকভাবে তাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ির (circadian rhythm) সম্পূর্ণভাবে গঠিত না হওয়ার কারণে একটু আলাদা হয়। তারা দিন ও রাতের পার্থক্য বুঝতে শেখেনি, তাই তারা সাধারণত ক্ষুধা, আরামদায়ক অবস্থা, এবং স্বাস্থ্যগত কারণে যেকোনো সময় জেগে ওঠে বা ঘুমায়।

গর্ভাবস্থার সময় মাতৃগর্ভে শিশুরা সাধারণত মায়ের চলাচলের সময় শান্ত থাকে এবং রাতের বেলা বেশি সক্রিয় থাকে। জন্মের পর, তাদের এই অভ্যাস থেকে নতুন সময়সূচিতে অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লাগে। ধীরে ধীরে, প্রায় তিন থেকে চার মাস বয়সে তাদের ঘুমের অভ্যাস একটু বেশি স্বাভাবিক হয় এবং তারা রাতের বেলা বেশি ঘুমাতে শুরু করে।

শিশুকে দিনের বেলা উজ্জ্বল আলোতে রাখা এবং রাতে অন্ধকার ও শান্ত পরিবেশে রাখলে তাদের শরীরের ঘড়ি দ্রুত সেট হতে সাহায্য করতে পারে।

 

নবজাতক শিশুদের ঘুমের ধরণ সম্পর্কে আরও কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো:

১. অপরিপক্ক মস্তিষ্ক: নবজাতক শিশুদের মস্তিষ্ক জন্মের সময় পুরোপুরি পরিপক্ক হয় না। এই কারণে তাদের ঘুমের চক্র খুবই ছোট এবং অসম হয়। নবজাতকদের ঘুম সাধারণত ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং তাদের REM (Rapid Eye Movement) ঘুমের সময় বেশি হয়। এই পর্যায়টি স্বপ্নের সাথে সম্পর্কিত এবং মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


২. ক্ষুধা ও খাদ্যের প্রভাব: নবজাতক শিশুদের পেট ছোট থাকে, তাই তাদের প্রায়ই খাবার খাওয়া দরকার হয়। রাতে তাদের ঘন ঘন জাগ্রত হওয়ার অন্যতম কারণ ক্ষুধা। দিনে ঘুমানোর সময় তাদের শরীরে শক্তি সংরক্ষণ হয় এবং রাতে ঘন ঘন খাওয়ার জন্য তারা জাগে।


৩. শারীরিক আরামদায়কতা: শিশুরা যদি গরম বা ঠান্ডা অনুভব করে, অসুস্থ থাকে, বা কোনোভাবে অস্বস্তি অনুভব করে, তাহলে তারা রাতে জাগতে পারে।


৪. অ্যাডজাস্টমেন্ট: গর্ভাবস্থায়, শিশুরা মাতৃগর্ভে যখন মায়ের চলাচল থাকে তখন মায়ের গতি তাদের শুইয়ে রাখে। কিন্তু রাতের সময় যখন মা বিশ্রামে থাকেন, শিশুরা বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। জন্মের পর এই অভ্যাস কিছু সময়ের জন্য বজায় থাকতে পারে।


৫. দিন-রাত চক্র শেখানো: নবজাতক শিশুদের দিন ও রাতের পার্থক্য শেখানো অভিভাবকদের দায়িত্ব। দিনের বেলা শিশুকে বেশি আলোতে রাখা এবং খেলাধুলা বা অন্যান্য সক্রিয় কার্যক্রম করা, আর রাতে অন্ধকার ও শান্ত পরিবেশে রাখা তাদের শরীরের ঘড়ি ধীরে ধীরে সঠিকভাবে সেট হতে সাহায্য করে।

৬. স্বাস্থ্যের বিষয়: যদি কোনো নবজাতক শিশু অসাধারণভাবে রাতে জেগে থাকে বা ঘুম নিয়ে সমস্যা হয়, তাহলে এটি শারীরিক কোনো সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে, যেমন গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, কোলিক, বা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা।



অভিভাবকদের জন্য ধৈর্য ও সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নবজাতকের ঘুমের ধরন সময়ের সাথে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে স্বাভাবিক ঘুমের প্যাটার্নে পরিণত হয়।



#healthcare #tips #newborn #care #parenting #parents #parenthood #ParentingTips #parentinghacks #ParentingJourney

সুস্থ জীবনযাত্রার ১০টি সহজ টিপস: আজ থেকেই শুরু করুন

সুস্থ জীবনযাত্রার ১০টি সহজ টিপস: আজ থেকেই শুরু করুন সৃষ্টিকর্তার সবচাইতে বড় নিয়ামতগুলোর মধ্যে একটি হলো সুস্থতা। আমরা সবাই সুস্থ থাকতে চাই ...